অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - আদর্শ জীবন চরিত | NCTB BOOK

হযরত শাহ জালাল (রহ.) ছিলেন একজন কামেল ওলি। তিনি একজন হিদায়েতের পথ প্রদর্শক, আধ্যাত্মিক সাধক এবং ইসলাম প্রচারক ছিলেন।

জন্ম ও পরিচয়

হযরত শাহ জালাল (রহ.) ৬৭১ হিজরি মোতাবেক ১২৭১ খ্রিস্টাব্দে ইয়েমেনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেখানেই প্রতিপালিত হন। তাঁর পিতার নাম মাহমুদ। শাহ জালাল তিন মাস বয়সে মাতাকে হারান। পাঁচ বছর বয়সে তাঁর পিতাও মৃত্যুবরণ করেন। এরপর মামা আহমদ কবির তাঁর লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

শৈশবকাল

হযরত শাহ জালাল (রহ.) তাঁর মামা ও শিক্ষাগুরু আহমদ কবিরের নিকট কুরআন-হাদিসসহ ইসলামের মৌলিক বিষয় শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তী কালে শাহ জালালকে তাঁর মামা ইয়েমেন থেকে মক্কায় নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে শরিয়ত ও মারেফত (তাসাউফ) এর শিক্ষা দান করেন। এছাড়াও তৎকালীন আলেমদের থেকে তিনি ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দ্বীনি বিষয়াদি শিক্ষা লাভ করেন। তাতে তিনি ইসলামের সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।

ইসলাম প্রচার

হযরত শাহ জালাল (রহ.) আল্লাহর দ্বীনের প্রচারক ছিলেন। তিনি ৭০৩ হিজরি মোতাবেক ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশ ত্যাগ করে ভারতীয় উপমহাদেশে হিজরত করেন। সিলেটের প্রথম মুসলমান শেখ বোরহান উদ্দিন (রহ.)-এর উপর রাজা গৌরগোবিন্দ অবর্ণনীয় অত্যাচার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হযরত শাহজালাল (র.) ৩৬০ আউলিয়াসহ সিলেটে আগমন করেন। একপর্যায়ে তাঁর সাথে জালিম রাজা গৌরগোবিন্দের এক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আল্লাহর রহমতে হযরত শাহ জালাল (রহ.) ও তাঁর অনুসারীরা জালিম রাজাকে পরাজিত করেন। তাঁর মামা মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবীর (র.) তাঁকে এক মুঠো মাটি দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, 'স্বাদে বর্ণে গন্ধে এই মাটির মতো মাটি যেখানে পাবে, সেখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করবে।' সিলেটের মাটির সাথে আরবের মাটির মিল পাওয়া যায়। তাই হযরত শাহজালাল (র.) সিলেটে বসতি স্থাপন করেন। অতঃপর সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণের আদেশ দেন। তিনিই সর্বপ্রথম সিলেট এলাকায় উচ্চস্বরে আযান দেওয়ার প্রচলন করেন। অতঃপর তিনি ইসলাম প্রচারের দিকে মনোনিবেশ করেন। সিলেট অঞ্চলে তার মাধ্যমেই ইসলামের প্রসার ঘটে। তিনি আদর্শজীবনের অধিকারী ছিলেন। হিন্দু-মুসলমান উভয়ের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য করতেন। তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অলৌকিকতে মুগ্ধ হয়ে অনেক মানুষ তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা তাঁর সফরনামায় উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর হাতে এ দেশের অধিকাংশ লোক ইসলাম গ্রহণ করেছেন'। তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ও সমাজ সংস্কারে যে অবদান রেখে গেছেন তার তুলনা উপমহাদেশে বিরল।

কারামত
শাহ জালাল (রহ.)-এর জীবন অসংখ্য কারামতে পরিপূর্ণ। তিনি জায়নামাযে দাঁড়িয়ে ৩৬০ জন সঙ্গীসহ সুরমা ও বরাক নদী পার হয়ে গিয়েছিলেন। ইবন বতুতাও তাঁর সফরনামায় শাহ জালাল (রহ.)-এর বেশ কিছু কারামত উল্লেখ করেছেন। যেমন ইবন বতুতা যখন তাঁর সাথে দেখা করতে সিলেট আসলেন, পথিমধ্যে দেখতে পেলেন, শাহ জালাল (রহ.) তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য তাঁর মুরিদদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অথচ ইবন বতুতা তাঁকে আগে খবর পাঠিয়ে আসেননি।

ইন্তেকাল  
হযরত শাহজালাল (রহ.) দীর্ঘ ২৩ বছর ইসলাম প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত থেকে ৭৪০ছি/১৩৪১ খ্রিস্টাব্দে সিলেটে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে সেখানেই দাফন করা হয়। হযরত শাহ জালাল (রহ.) ইবাদত ও আধাত্মিক সাধনার এক বিস্ময়কর প্রতীক ছিলেন। তিনি নিষিদ্ধ দিন ব্যতীত সারা বছর রোযা রাখতেন এবং রাতে ইবাদত করতেন। কাল পরিক্রমায় তিনি নিষ্ঠাবান দাঈদের জন্য আদর্শে পরিণত হলেন।

দলীয়/প্যানেল আলোচনা
হযরত ফাতিমা (রা.) এবং হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর জীবনাদর্শ তুমি বাস্তব জীবনে কীভাবে চর্চা করবে, তা দল্টেপ্যানেল আলোচনা করে উপস্থাপন (পোস্টার) করো।

 

Content added || updated By
Promotion